Tuesday, November 3, 2015

ফার্মি প্যারাডক্স ও আমার মোটা হওয়া

আমি যে অনেক বেশি খাওয়াদাওয়া(যতটুকু না হলেই না) করি না সেই কথা কেও বিশ্বাস করতে চায় না। করবেই বা কেন, ঘটনা এমন হয়ে দাড়িয়েছে যে কিছুদিন পর আমার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সমান হয়ে যাবে। দিন দিন মোটা হচ্ছি- হচ্ছি তো হচ্ছিই। কেন হচ্ছি তার কারণ অবশ্য অবর্তমান।  

স্বাক্ষর একদিন বলছিল, ‌‌‌‌‌‌‌'ওই মিয়া এতো খাও কেন?'

তো আমি বেশ কিছুদিন থেকে আমি কতটুকু খাচ্ছি তা তাকে দেখাচ্ছি। স্বাক্ষর আর আমি একই অফিসে চাকরি করি। সে সুবাধে খাওয়া দাওয়া একসাথে করা হয়। আমি খাওয়ার আগে স্বাক্ষরকে দেখাই কতটুকু খাচ্ছি।  
সে আজ বলছে “তোমার ঘটনা ফার্মি প্যারাডক্স এর মতো।”  

ফার্মি প্যারাডক্স বুঝতে হলে সবার আগে আমাদের রাতের বেলায় আকাশে তাকাতে হবে। তারপর অসংখ্য তারার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। তাকিয়ে থেকে থেকে এইসব মহাজাগতিক সৃষ্টি নিয়ে ভাবতে হবে।   

এ মহাবিশ্বের আকার এতো এতো বড় যে আমাদের কল্পনার জগৎকে এতো সহজে অতিক্রম করে যে নিজেকে তখন অনেক ছোট এবং অসহায় মনে হয়। পরিষ্কার রাতের আকাশে আমরা  খালি চোখে খুব বেশি হলে ২৫০০ তারা দেখতে পারি যেগুলোর  প্রায় সব গুলোই অন্তত্যপক্ষে ১০০০ আলোকবর্ষ দূরে। কিন্তু আমরা যখনি এইসব তারা আর ছায়াপথ নিয়ে চিন্তা করি তখনি আমাদের মাথায় সেই  সবচেয়ে কঠিন কিন্তু পুরোনো  প্রশ্নটি  আসে -  আরো কোন বুদ্ধিমান প্রাণি আছে এই মহাবিশ্বে ?  

আমাদের এই ছায়াপথে যতগুলো তারা আছে( ১০০-৪০০ বিলিয়ন),  মোটামুটিভাবে ততসংখ্যক ছায়াপথ আমাদের এই অবজার্বেবল ইউনিভার্সে আছে। সব মিলে সংখ্যাটা দাড়ায়- 10^22 থেকে 10^24 ।  
তার মানে দাড়ায় পৃথীবিতে যতগুলো বিচ আছে এবং সেগুলোতে যতগুলো বালি আছে, তাদের প্রত্যেকটির জন্যে ১০,০০০ তারা আছে।  

তবে সবাই অবশ্য আমাদের সূর্য্যের মতো তারকার সংখ্যা নিয়ে একমত হন না। মতামত ৫% থেকে ২০% এর দিকে থাকে সাধারণত। এই মতামতকে সম্মান করেও বলা যেতে পারে ৫০০ বিলিয়ন বিলিয়ন সূর্যের মত তারকা আছে। তো এগুলোর ১% এর মধ্যে যদি পৃথিবীর মতো একটি করে গ্রহ থাকে, তাহলে তার সংখ্যা ১০০ বিলিয়ন বিলিয়ন। ধরে নেই এক বিলিয়ন বছর লাগে একটি প্রথিবীর মতো গ্রহে প্রাণ তৈরি হতে। ধরে নেই, এর ১% গ্রহে প্রাণ মানুষের মতো উন্নত প্রাণিতে পরিণত হয়। তাহলেও আমরা বলতে পারি, এই অবজারভেবল ইডনিভার্সে অন্তত্যপক্ষে ১০ মিলিয়ন বিলিয়ন ইন্টেলিজেন্ট সিভিলাইজেশান আছে।  

কিন্তু যদিও অন্যান্য ছায়াপথে (গ্যালাক্সি) তে  ইন্টেলিজেন্ট সিভিলাইজেশান থাকে, কিন্তু সেগুলো সম্পর্কে জানার কোন উপায় নেই, এর কারণ হচ্ছে আমাদের এই ইউনিভার্স সবসময় সম্প্রসারিত হচ্ছে। যদিও আমাদের অনেক দ্রুত স্পেসশিপ থাকে, সেগুলো অন্য গ্যালাক্সিতে পৌছতে বিলিয়ন বছর লেগে যাবে। 

Let's forget about other universe. 

অবজারভেবল ইডনিভার্স থেকে শুধুমাত্র আমাদের এই ছায়াপথ মানে এই মিল্কিওয়ের কথা যদি চিন্তা করি, তাহলেও ১ বিলিয়ন পৃথিবীর মতো গ্রহে অন্তত্যপক্ষে ১০০,০০০   ইন্টেলিজেন্ট সিভিলাইজেশান আছে।  
যদি তাই হয়, এখন পর্যন্ত আমরা কোন সিগনাল পাইনি এইসব  ইন্টেলিজেন্ট সিভিলাইজেশান পক্ষ থেকে। তাইলে কই এরা ? রবীন্দ্রনাথের মতো বলবো -  

“আজ এই জোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে বসন্তের এই মাতাল সমীরণে।।”

কিন্তু সেটা কেও বলছে না। তাহলে ঘটনা কি?  

ঘটনাটা হচ্ছে, প্রবাবিলিটি বলছে ইন্টিলেজেন্ট সিভিলাইজেশন থাকার কথা। মানুষ এর এতোগুলো ইন্টেলিজেন্ট সিভালাইজেশন এর একটা ফ্রাকশন ও যদি  অন্ত্যত্যপক্ষে রেডিও সিগনাল বা লেজার বিম বা অন্য কোন উপায়ে সিগনাল পাঠাতে পারে তাহলে তা আমরা ধরতে পারবো, কিংবা আমাদের সিগনাল তারা ধরতে পারবে। কিন্তু সেই ঘটনা এখনো ঘটেনি।  

এই ঘটনা হচ্ছে ফার্মি প্যারাডক্স।  

এতো প্যাচাল পারার পর আসল ঘটনা বলি। সেটা হচ্ছে দুটি প্রবাবিলিটিক ঘটনা বলছে তাদের মধ্যে যোগাযোগ হওয়া উচিৎ কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না।  

আমি অনেক বেশি খাইনা, সুতরাং আমার মোটা হওয়ার পশ্নই উঠে না। কিন্তু রিয়িলিটি হচ্ছে আমি দিন দিন ফুটবলের মতো মোটাই হয়ে যাচ্ছি।  

যেহেতু ফার্মি প্যারাডক্স এর কারণ কেও এখনো উদ্ধার করতে পারে নি, আমিও জানি না কেন মোটা হচ্ছি। 

Sunday, October 18, 2015

অবসর নিয়ে ভাববার মতো অবসর কোথায়


একটা সময় ছিল যখন আমি চাইলেই কবিতা লিখতে পারতাম। কবিতা নিয়ে ভাবতাম। পুরো মাথায় রাজ্যের কল্পনা ভর করে থাকতো। মনে মনে নানারকম গল্প তৈরি করতাম। সেই সময়টাকে খুব মিস করি এখন।

বড় হয়ে যাওয়ার মাঝে অসুবিধে ছাড়া সুবিধে খুব একটা দেখিনে আজকাল। বড় হয়ে যাওয়া মানেই কল্পনার সেই অলিক পৃথিবীকে ছুড়ে ফেলে বাস্তবকে বেশি করে উপলদ্ধি করা। রূপকথা থেকে ইতিহাস কিংবা চলমান ঘটনা প্রবাহ বেশি প্রায়োরিটি পায়। ইদানিং গল্পের বই পড়া হয় না। বই পড়লে ইতিহাস, প্রবন্ধ, দর্শনের বই বেশি পড়া হয়। টিভি দেখি না। দেখলে খবর ছাড়া আর কিছু দেখা হয় না।

বড় হওয়াটা বড় রকম অন্যায়। তবে সুবিধের মধ্যে একটা সুবিধা অবশ্য আমি দেখি- সেটি হলো নিজের ইচ্ছে মতো খাওয়ার সুবিধে। এই যেমন খেয়ে খেয়ে ফুটবল হয়ে যাচ্ছি।

এই সপ্তাহের ছুটির দিন দুটো শুধুই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলেম। এতো অলস সময় অনেকদিন কাটানো হয় নি।

ইংরেজীতে একটা শব্দ আছে, ‌‌'Leisure'  যাকে আমরা বোধহয় ভুলতেই বসেছি। এই সময়টাতে সবাই কেমন করে জানি workaholic হতে বসেছি। আমি নিজেও কাজ করি। আনন্দ বা প্রমোদ যাই বলি না কেন সেটা খুবই সীমাবব্ধ রেখে কাজ করে যাওয়ার দলে আমি। নিজেকে প্রোডাক্টিভ রাখার চূড়ান্ত চেষ্টা আছে আমার। এই ব্যপারটিকে ইংরেজিতে হয়তো বলে productivity-fetishism.  এর বাংলা কি হতে পারে চিন্তা করে পেলাম না। এই সময়টাকে নিজের জন্যে আলাদা করে একান্তে কিছু ভাববার সময় খুব একটা নেই। সময় গুলো শুধুমাত্র কাজের জন্যেই। আলাদা করে নিজের জন্যে সময় বের করে নিজের মতো ব্যায় করাটা যেন অনেকটা self-indulgent luxury. কিন্তু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে যে - গ্রেট আর্ট কিংবা ফিলোসফিক্যাল আইডিয়াস, নানা রকম ব্রেকথ্রু গুলো কিন্তু অবসরের ভাবনার ফসল।

Leisure কিন্তু breaks, time off, weekends, vacation  এগুলোর সাথে যায় না। এটা অনেকটা আত্মার সাথে সম্পর্কিত। এর মানে কাজ থেকে পালানো নয় বা হঠাৎ করেও উধাও হয়েও যাওয়া নয়। বরাং নিজেকে নিজের মতো করে চলতে দেওয়া খানিকটা। অনেকটা হঠাৎ করে ঘুম চলে এলে নিজেকে ঘুম থেকে বিরত না রেখে ঘুমিয়ে পরা। নিজের মতো করে খানিকটা সময় নিরব থাকা। প্রতিদিনের কাজের জগৎ থেকে আলাদা হয়ে নিজের ভাবনার জগতে হারিয়ে যাওয়া হতে পারে। যা ইচ্ছে করে করা যেতে পারে। মনের মাঝে প্রশান্তি, এক ধরণের সুখ সুখ অনভূতি নিয়ে, সমস্ত কোলাহল থেকে আলাদা হয়ে, নীরব- নিস্তব্ধ ভাবে থাকাটাকে Leisure বলা যেতে পারে। এতে করে মানুষ তার নিজের নিজস্বতাকে ফিরে পায়। আরোপিত সকল কাজ, বাধা বিপত্তি থেকে নিজেকে দূরে রেখে একাকি নিজের ভাবনার সমুদ্রে ডুবে যেতে পারে, নতুন নতুন ভাবনা তৈরি করতে পারে।

এই সময়টা প্রত্যেকেরই প্রয়োজন।

যতোই বড় হচ্ছি আর নিজের মতো করে নিজের সময়টুকু বের করার ফুসরৎ আরও কমে যাচ্ছে।

অবসর নিয়ে ভাববার মতো অবসর কোথায় ?